টমেটো চাষ, টমেটোর রোগ ও প্রতিকার,
টমেটো

টমেটো চাষ পদ্ধতি

টমেটো ভিটামিন এ, বি এবং সি সমৃদ্ধ একটি সবজি। কাঁচা ও পাকা টমেটো রান্না এবং পাকা টমেটো সালাদ হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। তাছাড়া পাকা টমেটো প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি সস রুচিবর্ধক। টমেটো মূলত শীতকালীন সবজি। তব বর্তমানে গ্রীষ্মেও চাষ করা যায়।

টমেটো জাত

বাংলাদেশে টমেটোর অনেক অনুমোদিত জাত রয়েছে। শীতকালীন জাতের মধ্যে রয়েছে-ি বারি টমেটো-২ (রতন), বারি টমেটো-১ (লালিমা), বারি টমেটো-১০ (অনুপমা), বিনা টমেটো-৩ এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা জাত মারপ্লোব, রুমা ভিএফ, অক্সহার্ট ইত্যাদি। গ্রীষ্মকালীন জাতের মধ্যে রয়েছে- বারি টমেটো-৪, বারি টমেটো-৫, বারি টমেটো-৯ (লালিমা), বারি টমেটো-১০ (অনুপমা), বারি টমেটো-১১ (ঝুমকা), বারি হাইব্রিড টমেটো-৩, বারি হাইব্রিড টমেটো-৪ ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: মাশরুম চাষ পদ্ধতি : উপকারিতা, সুবিধা ও চাষযোগ্য মাশরুম জাত

মাটি

আলো-বাতাসযুক্ত উর্বর দোআঁশ মাটি টমেটো চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। তবে উপযুক্ত পরিচর্যায় বেলে-দোআঁশ থেকে এঁটেল-দোআঁশ সব মাটিতেই টমেটো ভালো জন্মে।

টমেটো চারা উৎপাদন পদ্ধতি

প্রতি হেক্টরে টমেটো চাষের জন্য ২০০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন। প্রথমে ৪টি বীজতলার (৩ মিটার × ১ মিটার) ৫০ গ্রাম করে বীজ ঘন করে বুনতে হবে। বীজ গজানোর ৮-১০ দিন পরে চারা তুলে দ্বিতীয় বীজতলায় ৪×৪ সেমি দূরে দূরে রোপণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে ২২ টি বীজতলার প্রয়োজন হবে। এতে করে সবল চারা পাওয়া যাবে। শীতকালীন জাতের জন্য সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ

৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। মাটির প্রকৃতি ও স্থানভেদে ১ মিটার চওড়া ও ১৫-২০ সেমি উঁচু বেড তৈরি করতে হবে। দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেমি চওড়া সেচ নালা রাখতে হবে, যাতে পানি সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধা হয়। টমেটো চাষের জন্য সার প্রয়োগের পরিমাণ  হচ্ছে-

টমেটো চাষ পদ্ধতি, টমেটোর রোগ ও প্রতিকার
শেষ চাষের আগে সম্পূর্ণ গোবর, সব টিএসপি িএবং তিন ভাগের দুই ভাগ এমওপি সার ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সার সমান ৩ কিস্তিতে চারা লাগানোর ১০ দিন, ২৫ দিন ও ৪০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। বাকি এমওপি সার দুই ভাগে ভাগ করে ২৫ দিন ও ৪০ দিন পর দিতে হবে।

টমেটো চারা রোপণ

চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন হলে রোপণের উপযোগী হয়। বীজতলা থেকে চারা অত্যন্ত যত্ন সহকারে তুলতে হবে যেন চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। এজন্য চারা তোলার আগে বীজতলার মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে। বিকেলের পড়ন্ত রোদে চারা রোপণ করাই উত্তম। রোপণের পর হালকা সেচ দিতে হবে। এক মিটার চওড়া বেডে দুই সারি করে চারা লাগাতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেমি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪০ সেমি রাখতে হবে।

আন্তঃপরিচর্যা

জমিকে নিয়মিত আগাছামুক্ত রাখতে হবে। চারা রোপণের প্রথম ৩-৪ দিন হালকা সেচ দিতে হবে। পরবর্তীকালে মাটিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে। সেচ অথবা বৃষ্টির কারণে জমিতে অতিরিক্ত পানি জমলে তা বের করে দিতে হবে। প্রথম ফুলের গোছার ঠিক নিচের কুশিটি ছাড়া সব পার্শ্ব কুশি ছাঁটাই করতে হবে। গাছ বাঁশের খুঁটি দিয় বেঁধে দিতে হবে।

টমেটোর রোগ ও প্রতিকার

ড্যাম্পিং অফ রোগ: ছত্রাকজনিত এ রোগে চারার গোড়ায় পানি ভেজা দাগ পড়ে ও পচে যায়। অনেক সময় শিকড় পচেও চারা মারা যায়। আক্রান্ত জায়গায় রিডোমিল গোল্ড দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।

ঢলে পড়া রোগ: ব্যাকটেরিয়াজনিত এ রোগে গাছ যেকোনো সময় ঢলে পড়ে ও দ্রুত মারা যায়। আক্রান্ত গাছ দেখলেই তা তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করতে হবে।

হলুদ পাতা কুঁকড়ানো রোগ: ভাইরাসজনিত এ রোগে পাতা কিনারা থেকে মধ্যশিরার দিকে গুটিয়ে যায়। পাতা খসখসে হয়ে শিরাগুলো স্বচ্ছ হলুদ হয়ে কুঁকড়িয়ে যায়। আক্রান্ত গাছের ডগায় ছোট ছোট পাতা গুচ্ছ আকার ধারণ করে। এ রোগ দমনের জন্য টমেটো ক্ষেত আগাছামুক্ত রাখতে হবে, রোগমুক্ত চারা লাগাতে হবে, আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। সাদা মাছি পোকা এ রোগের দ্রুত বিস্তার ঘটায়। মাছি পোকা দমনের জন্য ৭-১০ দিন পর পর এডমায়ার নামক কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।

টমেটো সংগ্রহ

সাধারণত চারা রোপণের দুই মাস পর হতে টমেটো পাকা শুরু করে। জাতভেদে টমেটোর জীবনকাল হয় ১২০-১৫০ দিন। ফল লালচে রং ধারণ করলে বোঁটা থেকে কেটে ফল সংগ্রহ করতে হবে। জাত ও মৌসুম ভেদে ফলনে পার্থক্য হয়ে থাকে। শীতকালে শতক প্রতি ২৫০ কেজি এবং গ্রীষ্মকালে ৮০-১০০ কেজি ফলন হয়ে থাকে।