পেঁপেঁ চাষ পদ্ধতি, পেঁপেঁ চাষ, সঠিক নিয়মে পেঁপেঁ চাষ, পেঁপেঁ চাষের সঠিক পদ্ধতি,
পেঁপেঁ চাষ
পেঁপেঁ অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণসম্পন্ন ফল। কাঁচা অবস্থায় তরকারি এবং পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে খাওয়া যায়। আমাদের দেশে সারা বছরই পেঁপেঁ পাওয়া যায়। বর্তমানে পেঁপেঁর চাষ বেশ লাভজনক। এক বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায় যা অন্যান্য ফল চাষে পাওয়া যায় না। তাই বাণিজ্যিকভাবে পেঁপেঁ চাষ করে অল্প সময়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। কিন্তু সঠিক পদ্ধতিতে পেঁপেঁ চাষ না করলে লাভবান হতে পারবেন না। আসুন, আজ জেনে নিই সঠিক পদ্ধতিতে পেঁপেঁ চাষ করে লাভবান হওয়ার উপায়।

পেঁপেঁর জাত

পেঁপেঁ চাষে লাভবান হওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে সঠিক পেঁপেঁর জাত নির্বাচন। বর্তমানে আমাদের দেশে শাহী, রাঁচি, ওয়াশিংটন, হানিডিউ, পুষা, রেড লেডি এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিড জাতের পেঁপেঁ চাষ করা হচ্ছে।

জমি নির্বাচন ও তৈরি

উপযুক্ত জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতকরণ হল পেঁপেঁ চাষে লাভবান হওয়ার দ্বিতীয় শর্ত। উঁচু  ও মাঝারি উঁচু দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি পেঁপেঁ চাষের জন্য উত্তম। তবে উপযুক্ত পরিচর্যার দ্বারা প্রায় সব ধরণের মাটিতেই পেঁপেঁর চাষ করা যায়। জমি ৩-৪ বার উত্তমরুপে চাষ দিতে হবে। পেঁপেঁ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই পানি যাতে চারার গড়ায় জমা না থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।


চারা তৈরি

ভালো জাতের বীজ অথবা মিষ্টি পেঁপেঁ থেকে বীজ সংগ্রহ করে বীজের উপরের সাদা আবরণ সরিয়ে টাটকা অবস্থায় বীজতলায় বা পলিথিন ব্যাগের মাটিতে বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের পর প্রযোজনীয় পানি সেচ দিতে হবে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে চারা গজাবে।

চারা রোপণ পদ্ধতি

পেঁপেঁ সারা বছরই চাষ করা যায়। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য আশ্বিন-কার্তিক বা ফাল্গুন-চৈত্র মাস উত্তম সময়। নির্বাচিত সময়ের দুই মাস আগে চারা তৈরির জন্য বীজ বপন করতে হবে। দেড় থেকে দুই মাস বয়সের চারা রোপণ করতে হবে। ২ মিটার দূরে ৬০ সেমি × ৬০ সেমি × ৬০ সেমি আকারের মাদা তৈরি করে চারা রোপণ করতে হবে। রোপণের ১৫ দিন পূর্বে মাদার মাটিতে সার মেশাতে হবে।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

প্রতিটি মাদায় ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম, ২৫ গ্রাম বোরাক্স, ২০ গ্রাম জিংক সালফেট এবং ১৫ কেজি জৈব সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর গাছে নতুন পাতা এলে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি এক মাস অন্তর প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফুল এলে এ মাত্রা দ্বিগুণ করতে হবে। শেষ ফল সংগ্রহের এক মাস পূর্বেও এমওপি ও ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।

অন্তর্বতীকালীন পরিচর্যা

একলিঙ্গ জাতের ক্ষেত্রে প্রতি মাদায় ৩টি চারা রোপণ করতে হবে। ফুল এলে ১টি স্ত্রী গাছ রেখে বাকি গাছ তুলে ফেলতে হবে। পরাগায়নের সুবিধার জন্য বাগানে ১০% পুরুষ গাছ রাখাটা ভালো। ফুল হতে ফল ধরা নিশ্চিত মনে হলে একটি বোঁটায় একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে। গাছ যাতে ঝড়ে না ভাঙে তার জন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হবে।

রোগ-পোকা ও প্রতিকার

বীজতলা বা পলি ব্যাগের মাটি সেঁতসেঁতে থাকলে চারার ঢলে পড়া এবং সুষ্ঠু নিকাশ ব্যবস্থার অভাবে বর্ষার সময় মাঠে বয়স্ক গাছে কান্ড পচা রোগ দেখা দিতে পারে। ছত্রাকজনিত এ রোগ দমনের জন্য গাছের গোড়ার পানি নিকাশের ভালো ব্যবস্থা রাখতে হবে। রোগাক্রান্ত চারা গাছ মাটি থেকে উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। পেঁপেঁ গাছে মোজাইক ভাইরাস ও পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাস রোগ দেখা দিতে পারে। মোজাইক রোগে পাতা হলদেভাব ও মোজাইকের মতো মনে হয়। এসব রোগে পাতার ফলক পুরু ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। বাগানে কোনো গাছে ভাইরাস দেখা দিলে তা সাথে সাথে উপড়িয়ে পুঁতে ফেলতে হবে।

ফল সংগ্রহ

পেঁপেঁ ফলের কষ জলীয়ভাব ধারণ করলে সবজি হিসেবে সংগ্রহ করা যায়। ফলের ত্বক হালকা হলদে বর্ণ ধারণ করলে পাকা ফল হিসেবে সংগ্রহ করা যায়। জাত ভেদে ফলনে পার্থক্য দেখা যায়। তবে শাহী পেঁপেঁর ফলন প্রতি হেক্টরে ৪০-৫০ টন হয়।