শামুক |
শামুক
শামুক হলো ‘মলাস্কা’ পর্বের নরমদেহী প্রাণী। এর দেহ খোলস দ্বারা আবৃত থাকে। পুকুর, নদী, জলাশয়, সমুদ্র, স্বাদু পানি সব জায়গায় শামুকের দেখা পাওয়া যায়। শামুক সাধারণত তৃণভোজী হয়ে থাকে। এরা গাছের নরম বাকল, পাতা, ফল, শাক ইত্যাদি খেয়ে থাকে। সামুদ্রিক শামুকগুলো জলজ আণুবীক্ষনিক জৈববস্তু খেয়ে জীবনধারণ করে। সামুদ্রিক কিছু শামুকর প্রজাতি মাংসাশীও হয়ে থাকে।
শামুকের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
শামুকর অর্থনৈতিক গুরুত্ব দিনদিন বেড়েই চলেছে। পার্বত্য অঞ্চলের (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান) পাহাড়িদের কাছে শামুক একটি উপাদেয় খাদ্য। শামুকের চাহিদা বেশি থাকায় এসব অঞ্চলে বেশ চড়া দামে বিক্রি হতে দেখা যায় শামুক। সাধারণত শামুকের শাঁস ১ পোয়া ১০০-১২০ টাকা এবং খোলসসহ শামুক কেজি প্রতি ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হয় এসব অঞ্চলে।
শামুকের শাঁস বা মাংসল অংশটি মাছ ও হাঁস-মুরগীর খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। নিয়মিত শামুক খাওয়ালে হাঁসের ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মাছের ঘেরে মাছ ও চিংড়ির খাদ্য হিসেবে শামুকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শামুকের মাংসে পুষ্টিগুণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মানুষের মাঝে শামুক খাদ্য হিসেবে গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই দেশের কিছু বড় রেঁস্তোরাতেও এখন শামুকের নানা পদ পাওয়া যাচ্ছে।
শামুকের খোলস থেকে চুন তৈরি করা হয় যা মাছ চাষ ও অন্যান্য বিভিন্ন কাজে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। পান খাওয়ার অন্যতম উপাদান খাওয়ার চুনও শামুকের খোলস থেকেই তৈরি করা হয়। এছাড়া শামুকের খোলস থেকে দু’ধরণের প্রক্রিয়াজাত দ্রব্য পাওয়া যায়। শামুকের খোলস রোদে শুকিয়ে মেশিনে গুড়া করে এসব দ্রব্য পাওয়া যায়। যার একটি পাউডার এবং অন্যটি দানা পাউডার। পাউডার অংশটি ফিশমিল তৈরিতে এবং দানা পাউডার পোল্ট্রি খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
মাছ চাষে শামুকের ব্যবহার বেশ পরিবেশবান্ধব। শামুকের শরীরে বিদ্যমান প্রাকৃতিক জলশোধন ব্যবস্থা পুকুরে বায়োফিল্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শামুক ময়লাযুক্ত জল পান করে বিশুদ্ধ পানি বাইরে ছাড়ে। শামুক থেকে উৎপাদিত খাবার মাছের প্রাকৃতিক খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শামুকের তৈরি খাদ্য চিংড়ি, কৈ, মাগুর, পাঙ্গাশ মাছের প্রিয় খাদ্য।
শামুক প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। ধানচাষে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শামুকের মাংস ও খোলস পচে প্রাকৃতিকভাবে জমিতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়াম তৈরি করে যা জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
শামুকের চাহিদা বিবেচনায় বাণিজ্যিকভাবে শামুক চাষ হতে পারে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীর একটি বড় পথ। অর্থনৈতিক গুরুত্বের বিবেচনায় অপ্রচলিত এই জলজ প্রাণীর চাষে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। পাশাপাশি সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। বিদেশে শামুকের প্রচুর চাহিদা থাকায় রফতানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। বিদেশেও দিনদিন শামুক চাষের বাণিজ্যিক প্রসার ঘটছে। গ্রিস তাদের মধ্যে অন্যতম। আপেল শামুক চাষ করে এখন গ্রিসের অনেক বেকার যুবক-যুবতী স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
শামুক চাষ
শামুক চাষ পদ্ধতি বেশ সহজ এবং খুব অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করা সম্ভব। শামুকর প্রজনন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় শামুকের বাণিজ্যিক চাষ বেশ লাভজনক। প্রতি ডেসিমেল হিসেবে গোবর ও খোল (সরষে) এক কেজি করে এবং ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া জলে ভালোভাবে মিশিয়ে চার ভাগ করে তিন দিন অন্তর করে জলে ছিটিয়ে দিতে হবে। জলের রং গাঢ় সবুজ হলে শামুক ছেড়ে দিতে হবে।
প্রতি ডেসিমেলের বিপরীতে ২৫০-৩০০ গ্রাম শামুক ছাড়তে হবে। পরবর্তী ১০-১৫ দিনের মধ্যে শামুক বংশবিস্তার শুরু করবে এবং ৪০-৪৫ দিন পর শামুক সংগ্রহের উপযোগী হবে।
শামুক সংগ্রহ পদ্ধতিও বেশ সহজ। বাঁশ বা কাঠের অনেকগুলো বড় লাঠি পুকুরে দিয়ে রাখতে হবে। শামুকগুলো ঐ লাঠিগুলোর সাথে আটকে থাকবে। তখন লাঠিগুলো তুলে এনে শামুকগুলো ছাড়াতে হবে। এভাবে একটি পুকুরে বছরে চার বার শামুক চাষ করা সম্ভব। এবং হেক্টরপ্রতি বছরে চার থেকে ছয় টন শামুক উৎপাদন করা সম্ভব।
0 Comments